News:

১০০ বছর পুরানো বিদ্যালয় ইতিহাস যা এখনো অনেকেই জানে না!

 

মানুষ তার সুন্দর ও কল্যাণ মূলক কাজের মধ্যেই শত শত বর্ষে স্বরণীয় থাকে। ঠিক এভাবেই মুখার্জী পরিবার স্বরনীয় তাদের সৃষ্টি “রাজদিয়া অভয় পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ১০০ বছর পর তাদের পরিবারের উত্তরাধিকার ধারা লিপিবদ্ধ করতে যেয়ে দ্বৈত ধারনার মুখোমুখি বর্তমান।

 

১ম ধারনাঃ

অভয় চরণ মুখার্জীর এক ছেলে- নাম গোপাল মুখার্জী, তিনি তার পিতা অভয় চরণ মুখার্জীর নাম অনুসারে ১৯১৮ সালে এই স্কুল নামকরণ করেন। যা আমরা আমাদের বিদ্যালয় রচনাতে পড়েছিলাম। গোলাপ মুখার্জীরা ছিলেন ৩ ভাই ও ৩ বোন। ১ম- অজিত মুখার্জী, ২য়- রঞ্জিত মুখার্জী, ৩য় জনের নাম জানা নাই। ব্যাক্তি জীবনে রঞ্জিত মুখার্জী ছিল অবিবাহিত। আর অজিত মুখার্জীর ছিল ৩ ছেলে ও ৬ মেয়ে। তিন ছেলের নাম ১ম- অশোক মুখার্জী (বর্তমানে মৃত), ২য়- অজয় মুখার্জী (বর্তমানে মৃত), ৩য়- অভিজিৎ মুখার্জী (জীবিত, বাসস্থান- বড়াইপুর, চব্বিশ গরগনা, কলকাতা), ৬ মেয়েদের নাম বড়ক্রমে ১ম- রানু গাঙ্গুলী, ২য়- মানু লাহিড়ি ৩য়- শুক্রা ৪র্থ- রত্না ব্যানাজী, ৫ম- চিত্রা ভট্রাচার্য ও ৬ষ্ঠ রীমা গোস্বামী।

 

২য় ধারনাঃ অভয় মুখার্জীর ৩ ছেলে। ১ম- মহেন্দ্র চরণ মুখার্জী, 2য় গোপাল মুখার্জী (প্রাণ কুমার), ৩য় অনন্ত কুমার মুখার্জী।

 

দ্বৈত মতঃ

১ম মতঃ মহেন্দ্র কুমার মুখার্জীর বংশধর অজিত মুখার্জী ও রঞ্জিত মুখার্জী।

২য় মতঃ গোপাল মুখার্জীর বংশধর অজিত মুখার্জী রঞ্জিত মুখার্জী।

 

মত পার্থক্য যাই হোক তৎকালীন সময়ে প্রায় ৪ একর জমির উপর গোপাল মুখার্জী তার ৩ সন্তানদের দাবীর প্রেক্ষিতে বা অত্র এলাকার স্কুল সংকটের কারণে ৭ দিনের ব্যবধানে তাদের চাঁদপুরের পাটের গোডাউন বিক্রি করে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু স্কুল শুরুর স্থান নিয়ে ও মত পার্থক্য আছে। স্কুল প্রতিষ্ঠার পর স্কুল অনুমোদন নিয়ে একটি জনশ্রুতি আছে যা উল্লেখ না করলে নয়। তৎকালীন ক্যালকাটা স্কুল পরিদর্শক কে অতিরিক্ত পথ ঘুরিয়ে আনা হয় কারণ চিল তৎকালীন সময়ে আইন অনুসারে ৩ মাইলের মধ্যে কোন স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয় না। এটা করার কারণ ছিল ইছাপুরা উচ্চ বিদ্যালয় ছিল ৩ মাইলের মধ্যে। জনশ্রতি আছে তৎকালীন স্কুল পরিদর্শককে কিছু উপকোটন প্রদান করা হলে যা ঘুষ হিসেবে স্কুল পরিদর্শক প্রত্যাক্ষাণ করেন। এর কারণে স্কুল পরিদর্শক ও মুর্খাজী পরিবারের মধ্যে মত পার্থক্য হয়। রাত্রি যাপন এর পর পরিসামাপ্তি ঘটে পারিবারিক ধারার উপহার হিসাবে গণ্য করে। উপহার ছিল স্বর্ণ মুদ্রা ৫টি এবং পানের ডাবর ১টি। প্রতি বছর স্কুলের দায়ভার অজিত শুখার্জী বছর শেষে দেনা পরিশোধ করতেন। অভয় মুখার্জী, গোপাল মুখার্জী ও অজিত মুখার্জীর দেহবাশেষ এই রাজদিয়া গ্রামেই সমাহিত করা আছে। স্কুল প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে শ্রী রজনী কান্ত দাস প্রথম দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ঐ সময়ের প্রথম ছাত্র হিসেবে অজিত মুখার্জী, রঞ্জিত মুখার্জী, ভুপেন্দ্র দাস, আরো কতিপয় ছাত্র দ্বারা বিভিন্ন ক্লাশ হয় এবং তা ২য় শ্রেনী থেকে।

 

১৯২৫ সালে স্কুলের প্রথম ছাত্র হিসেবে আঃ মজিদ মিয়া প্রথম বিভাগ প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে স্কুলের ইতিহাসে ১০ম তম স্থান লাভ করেন রেজাউল কবীর নামের একজন ছাত্র। ১৯৮২ সালে এই স্কুল প্রথম সমগ্র উপজেলার পরীক্ষাকেন্দ্র হিসেবে স্থান লাভ করে। র্দীঘ ৯৬ বছরের ইতিহাসে এই স্কুলের অনেক ভালো ফলাধারী ছাত্র-ছাত্রী আছেন। সংগ্রহীত তথ্য উপাত্তের উপর স্কুলের পরিচিত তুলে ধারার চেষ্টা করা হলো। ভবিষ্যতে আরেও ব্যাপক ভাবে কেও না কেও হয়েতো এগিয়ে আসবে। ধন্যবাদ।

 

আমরা জানি বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির বিশ্বায়নের যুগে পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। একটি জাতির শক্তির উৎস তার দক্ষ জনসম্পদ। আর দক্ষ জনসম্পদ তৈরিতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। সরকার একবিংশ শতকের উপযোগী বাংলাদেশ গড়তে তাই শিক্ষার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। প্রনয়ন করা হয়েছে যুগোপযোগী শিক্ষানীতি।

 

বিদ্যালয়টিতে রয়েছে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত অবকাঠামোগত সুবিধা। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি শুধু তার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা ও মননেরও পরিচায়ক। বিদ্যালয়টি ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চ নৈতিকমান গঠন ও দেশপ্রেমের শিক্ষায় একজন প্রকৃত নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব প্রদান করে আসছে। এই লক্ষ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠ্য পুস্তকের পাশাপাশি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি সম্পর্কেও বাস্তব ধারণা প্রদান করা হয়। আমরা আশা করি অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একুশ শতকের উপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ-মাতৃকার কল্যাণে তার অবদান রাখবে। আমরা আশা করি বিদ্যালয়টি অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের একটি অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।